তুমার মানে বুক চিতিয়ে সোজা কথা বলা,
তুমার মানে বাচঁতে শেখা, সোজা রাস্তায় চলা।
তুমার, তুমার তুমার বলো তুমাকে আজ চাই
মানুষগুলান ঘুমিয়ে গেল, তুমার দেখা নাই।
অতনু বর্মনের লেখা একটি আঞ্চলিক ভাষার কবিতা। কলেজের লাইব্রেরীতে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে রুকু কবিতাটা শুনছিল। সে এই কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। দেড় ঘন্টা আগে ক্লাস শেষ হয়ে গেছে। রুকু তিন তলার জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দুপুর গড়িয়ে গেছে। বাড়ি ফিরতে হবে। গল্প দাদুর কাছ থেকে নেয়া উপন্যাসটা শেষ করতে বেশ সময় লাগলো। উপন্যাসের নাম দেবী চৌধুরানী। লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। রুকু ভুরু কুচকে কিছুক্ষণ বইটার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর গ্রন্থাগারে গিয়ে বইটা জমা দেয়। গ্রন্থাগারিকের নাম আব্দুর রহমান। কলেজে মেয়েরা তাকে গল্প দাদু বলে ডাকে। গত বছর বইমেলায় গল্প দাদুর বই প্রকাশিত হয়েছে। ষাটোর্দ্ধো এই মানুষটি অর্থাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করতে পারেন নাই। কিন্তু সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ ছিল। তিনি নীরবে সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন।
রুকু কে জিজ্ঞাসা করেন, কি রে মা? বইটা কঠিন লেগেছে? রুকু নিঃশব্দে মাথা নাড়ে। গল্পদাদু আবার বলেন, তোকে বলেছিলাম প্রথমে শরৎ রচনাবলী পড়তে। বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমের রচনা আয়ত্ত্ব করা দূরহ। সেইজন্য সাধনা করতে হয়। রুকু বলে, উপন্যাসটা কিছুটা বুঝেছি। তবে উপসংহারটা আমার ভাল লাগে নাই। প্রফুল্ল এত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে তিন সতীনের সংসারে বাসন মাজার জন্য ফিরে এলো কেন? তার তো আপসহীন বিদ্রোহী হওয়া উচিত ছিল। গল্পদাদু একটু অবাক হয়ে রুকুকে দেখেন। ষোল বছরের এই কিশোরী মেয়েটি গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তাকে রীতিমতো সংগ্রাম করে লেখাপড়া করতে হয়। গল্পদাদু বলেন, মানুষ যে যুগে বা যে সমাজ ব্যবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, তার চিন্তা ও কাজ সেই সামাজিক বৈশিষ্ঠ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। নিজের কালের তুলনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে অগ্রসর ছিলেন। যেমন অগ্রগণ্য ছিলেন সতীদাহ প্রথা নিবারণকারী মনীষী রাজা রামমোহন রায়। একটু থেমে গল্পদাদু আবার বললেন, পৃথিবীতে একুশ শতক চলছে। মেয়েরা বিজ্ঞানে বা সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পাওয়া থেকে শুরু করে নভযানে চড়ে মহাকাশে যাচ্ছে। তাই বর্তমান প্রজন্মের চিন্তাভাবনা আরো অগ্রসর হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
কলেজ থেকে রুকুর বাড়ি বেশ দূরে অবস্থিত। এই পথটা সে একা যাতায়ত করে। তার বাবা পাটের ব্যবসা করেন। বেশির ভাগ সময় তাকে শহরে আর গ্রামে আসা যাওয়া করতে হয়। রুকুর ছোট দুটো ভাই বোন আছে। তাদের দেখাশোনা ছাড়াও মা কে সংসারের কাজ করতে হয়। রুকু বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সামনে মতি মিঞার দোকান ছাড়িয়ে আরেকটু হাটঁলে তাদের বাড়ি। কিন্তু দোকানের সামনে আসা মাত্র রুকুর হৃৎকম্প শুরু হয়। নিত্য দিনের মতো বেঞ্চে কালাম তার তিন সাঙ্গপাঙ্গসহ বসে আছে। তাদের মধ্যে কৃশকায় একটা যুবক রুকু কে দেখে দাতঁ কেলিয়ে হেসে বলে, ওস্তাদ, চিকনি চামেলি এসে গেছে। কালামের মাথায় টাক পড়তে শুরু করেছে। পিছনে ঝাকড়া চুল। চোখ সবসময় নেশা করার জন্য লাল টকটকে থাকে। সিগারেট ফুকে রুকুর উদ্দেশ্যে বিকৃত হিন্দী উচ্চারনে গেয়ে ওঠে, রুকু পানি, রুকু পানি, শাদী কা বাত কেয়া হুয়া?
রুকু নীরবে জায়গাটা পার হয়. গত এক বছর ধরে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে গেছে। উঠানে মা টিউবওয়েলের হাতল চেপে কলসীতে পানি ভরছিল। রুকু কে দেখে বলেন, এতক্ষণে তোর বাড়ি ফেরা হলো? হাতমুখ ধুয়ে আয়। কলতলায় কয়টা বাসন বাটি আছে। ধুয়ে ফেলিস। রুকু অবসন্নভাবে ঘরের দাওয়ায় বসে পড়ে। তার ক্লান্তি মায়ের চোখ এড়ায় না। কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, কি রে? তোর কি হয়েছে? রুকু নির্বাক। মা উদ্বিগ্নভাবে প্রশ্ন করেন, ওই ছেলেগুলো রাস্তায় আবার বিরক্ত করেছে? রুকু মাথা নিচু করে বসে থাকে। মায়ের গলা চড়ে ওঠে, তখনি বলেছিলাম কলেজে পড়ার দরকার নেই। ধিঙ্গী মেয়ে। কত ভাল ভাল বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। মেয়ে রাজী হয়নি। এখন বংশের মুখে চুনকালি না দিয়ে তুই ছাড়বি না।
রুকু মৃদুস্বরে বলে, দোষ তো শিক্ষা বা কলেজের না। দোষ সমাজের কিছু মানুষের। মায়ের কণ্ঠ এইবার সপ্তমে চড়ে, তুই আবার মুখে মুখে কথা বলছিস? কলেজে এত মেয়ে পড়ে। তাদের তো সমস্যা হয় না। তোর হয় কেন? রুকু চুপ করে থাকে। মা আবার বলেন, বাইরে বের হওয়ার সময় বোরখা পড়বি। রুকু বাইরে যাবার সময় গায়ে ওড়না জড়িয়ে , হিজাব পড়ে বের হয়। বোরখা পড়তে তার আপত্তি নেই। তবু যদি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া যায়।
রুকুর বড় বোনের অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় হয়ে গেছে। উত্তর বঙ্গের এই গ্রামে মেয়েদের প্রতিপালন করা হয় বিয়ের উদ্দেশ্যে। রুকু এদের মধ্যে ব্যতিক্রম। অদম্য মেধাবী এই মেয়েটি স্কুলে পড়ার সময় শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে। রুকুদের স্কুলে গণিত শিক্ষক ছিলেন আব্দুর রউফ। স্যার অবাক হয়ে লক্ষ্য করতেন, রুকু রীতিমত সাধনা করে অঙ্ক কষত। রউফ স্যার মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন। একবার ঢাকা থেকে তিনি রুকুর জন্য চারটে বই কিনে নিয়ে যান। বিজ্ঞানী আইনিস্টাইনের জীবনী এবং আশাপূর্ণা দেবীর অবিস্মরনীয় ট্রিলজী প্রথম প্রতিশ্রুতি, সূবর্নলতা আর বকুল কথা। স্কুলে থাকতে রুকুর বেগম রোকেয়ার রচনাবলীর সাথে পরিচয় হয়েছে। আর এখন এই বইগুলো তার সম্মুখে আলোকিত জগতের দ্বার উম্মোচন করে দেয়। সে অবাক হয়ে ভাবে লেখাপড়া শেখার জন্য সত্যর সংগ্রামের কথা। নারীর অধিকার আর সন্মানের জন্য সূবর্নলতাদের লড়াই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের যোদ্ধাদের থেকে কোনো অংশে কম কঠিন ছিল না।
এস, এস, সি পরীক্ষায় রুকু জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। বাবা মা খুশি হলেও তার উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে ছিলেন নিমরাজী। রউফ স্যার রুকুর বাবা কে বলেছিলেন, আসগর ভাই, মেয়েটা কে কলেজে ভর্তি করে দেন। বাবা উত্তরে বলেন, পরিবারের মানুষ রাজী না। গ্রামে যদি কথা হয়। রউফ স্যার বলেন, মেয়ে লেখাপড়া করতে চায় এটা তো আনন্দের কথা। বাবা মায়ের দায়িত্ত্ব সন্তান কে শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করা। আপনার তো উপার্জন মন্দ নয়। সংসারে অভাব নাই। মেয়েটা কে পড়তে দেন। স্যারের কথায় আর রেজাল্ট দেখে বাবা রুকু কে কলেজে ভর্তি করে দেন।
কালাম গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। ধনী বাবার বখে যাওয়া সন্তান। তার বয়স তিরিশের কোঠায়। সে বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। গতবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় গ্রামে কালামের নেতৃত্বে সহিংস ঘটনা ঘটে। মারামারির এক পর্যায়ে কালাম প্রতিপক্ষের এক ব্যক্তির হাতের কব্জী কেটে নেয়। বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রামবাসীর কাছে সে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। রুকু কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার প্রতি কালামের নজর পড়ে। প্রথমে তাকে প্রেম নিবেদন করে কালাম। রুকু ভদ্রভাবে প্রত্যাখান করে। কিন্তু কালাম তার পিছু ছাড়ে না।
রুকুর বাবা বাড়ি আসে সন্ধ্যার পর। বিকালে মা যতই রাগ করুক সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে ছিলেন। রাতে খাওয়ার পর মা বাবা কে বলেন, আপনে একবার চেয়ারম্যান সাবের বাড়ি যান। বাবা জিজ্ঞাসা করেন, ক্যান কি হইছে? মা বলেন , কালাম আবার রাস্তায় রুকুরে বিরক্ত করছে। কথাগুলো শুনে বাবা চুপ করে বসে থাকেন। গত মাসে এই বিষয়টা নিয়ে গ্রামে সালিশ হয়েছে। কালাম এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে কথা দিয়েছে, সে আর রুকু কে বিরক্ত করবে না। কালামের বিনয় সত্ত্বেও বাবার মনে আশঙ্কা ছিল। তার শঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছে। এখন এই পিতা কি করবেন? কার কাছে সন্তানের নিরাপত্তা চাইবেন?
রাতে বিছানায় শুয়ে রুকুর ঘুম আসছিল না। সে মার্কিন লেখক ও হেনরীর লেখা ছোটগল্প গিফট অফ মেজাইয়ের কথা ভাবছিল। প্রেমের সেই সুমধুর আখ্যান থেকে বাস্তবের ঘটনা কত কুৎসিত। রুকু সদ্য যৌবনে উপনীত হয়েছে। ভাল লাগার কিছু অনুভূতি অস্পষ্টভাবে মনে আসছে। গ্রীষ্মের আমের বোলের ঘ্রাণ তাকে আনমনা করে দেয়। কিন্তু অনুভূতিগুলো দানা বাধঁতে পারে না। একটা বিভীষিকাময় আতঙ্ক তার সমস্ত সত্ত্বা কে গ্রাস করেছে।
আজ সকালে কলেজে যাবার পথে রুকু দেখতে পায় কালাম নির্দিষ্ট স্থানে বসে আছে। রুকু কে দেখে শিস দিয়ে ওঠে। আর তার সঙ্গীরা অশ্লীল গান গাইতে শুরু করে। হঠাৎ কি হলো কে জানে। নিত্য দিনের মতো রুকু এড়িয়ে গেল না। সোজা গিয়ে কালামের মুখোমুখি দাড়াঁয়। তারপর বলে, কালাম ভাই, আপনার তো স্ত্রী সন্তান আছে। তবু আমাকে বিরক্ত করেন কেন? সরাসরি এইভাবে প্রশ্ন করায় কালাম একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তবে তা ক্ষণিকের জন্য। তরল কণ্ঠে বলে, আমি তোমার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছি। সিনেমার গানে নায়ক যেমন বলছে, আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্ক ভাগী। রুকু ঠান্ডা গলায় বলে, গানটার রচয়িতা কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আপনার এই একতরফা প্রেম নিবেদনের উত্তরে বলতে পারি , কোনো মানুষ যদি প্রণয় প্রার্থী কে প্রত্যাখান করে তবে তার উপর জোর খাটানো ইতরের কাজ। কালামের চোখ নেশার ঘোরে এমনি লাল থাকে। এখন রক্তবর্ণ ধারন করে। মুখের মাংস পেশী শক্ত হয়ে যায়। রুকুর দিকে একবার হিংস্র চোখে তাকিয়ে সে দোকান থেকে চলে যায়। কালামের সঙ্গীরা নীরবে গুরু কে অনুসরন করে। কাজটা ভাল হলো কিনা কে জানে? তবে রুকু আর বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সোজা কলেজের দিকে হাটঁতে শুরু করে।
দিনের শেষে সূর্য অস্ত গেছে। মায়ের দুশ্চিন্তা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। রুকু বাড়ি ফেরে নাই। সন্ধ্যায় বাবা বাড়ি আসতেই মা ছুটে যান। আপনে খোজঁ করতে যান। রুকু বাড়ি ফেরে নাই। বাবা ঘরে না ঢুকে সন্তানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোজঁ শেষে থানায় যান। মধ্য রাতে বাড়ি ফেরেন। বাবার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে মা আসন্ন সর্বনাশের বিষয়টা বুঝতে পারেন। এই শীতের রাতেও রুকুর ছোট ভাই বোন দুটো জেগে আছে। নীড় হারা পক্ষী শাবকের মতো থরথর করে কাপঁছে। রুকু কে পুলিশ উদ্ধার করে তিন দিন পর। পাট খেতের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। খবরটা যাতে চাউর হয় এবং গ্রামের মানুষ কালামের বিরুদ্ধাচ্চারণ না করে সেই জন্য গণধর্ষনের পর মাইক্রোবাসে করে রুকু কে খেতের ধারে ফেলে রেখে তারা বীরদর্পে চলে যায়।
চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। রুকু গত সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছে। ঘরে জানালার ধারে দাড়িঁয়ে ছিল সে। তার পোষা বিড়াল লাড্ডু পায়ের উপর মুখ ঘষে রুকুর দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করছে। রুকু নিচু হয়ে বিড়ালটার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার খেয়াল হয় গত এক সপ্তাহই বিড়ালটা ছাড়া কেউ তার কাছে আসে নাই। কথা পর্যন্ত বলে নাই। সেই ঘটনার পর রুকুদের পরিবার গ্রামের মধ্যে একঘরে হয়ে গেছে। অবধারিতভাবে সব দোষ মেয়েটির। চার চারটে পুরুষ রুকুর শরীরে হাত দিয়েছে। সেটা নিয়ে রসালো কথাবার্তা তো আছে। উপরন্তু কালামের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় রুকুর প্রতি গ্রামে কারো সহানুভূতি প্রকাশের উপায় নাই। ইচ্ছাও নাই। এমন কি পাড়ার বৌ ঝিয়েরা বাড়ি এসে বলে গেছে, রুকু যেন গ্রামের পুকুরে স্নান করতে না যায়। গ্রামের মহিলারা পুকুরে ওযু করে। রুকু পানি স্পর্শ করলে পুকুর অপবিত্র হয়ে যাবে।
বিকালে বাবা ঘরের দাওয়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। এমন সময় দুইজন লোক উঠানে প্রবেশ করে। গ্রামের চেয়ারম্যান আর তার সাথে কালামের বাবা। চেয়ারম্যান সালাম দিয়ে বলে, ভালই হলো। আসগর ভাই কে বাড়িতে পেয়ে গেলাম। আপনার ব্যবসা কেমন চলতেছে? অতিথি দুইজন কে দেখে বাবা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছেন। আর তাদের অমায়িক কথাবার্তায় কিছুটা ভয় পান। তবু তিনি দুটো চেয়ার এগিয়ে দিয়ে তাদের বসতে দেন। এইবার কালামের বাবা বলে, আপনার মেয়েটা তো হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছে। ভাল আছে সে? বাবা মাথা নাড়ে। চেয়ারম্যান বলে, আসগর ভাই, যা হবার তা হয়ে গেছে। কালাম আগে থেকে রুকুরে পছন্দ করতো। মেয়েটা যদি তখন রাজী হয়ে যেত তাহলে দূর্ঘটনা ঘটত না। যাই হোক আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে আসছি। কালাম রুকুরে বিয়ে করবে। আপনারা মামলা তুলে নেন। ওরা সুখে শান্তিতে সংসার করুক।
রুকু ঘরের ভিতর থেকে সব শুনেছে। হাসপাতাল থেকে ফিরলেও তার ট্রমা যায়নি। সে আর যাই হোক এই ধরনের প্রস্তাবের জন্য প্রস্তুত ছিল না। ঘর থেকে বের হয়ে এসে রুকু অতিথিদের সম্মুখে দাড়াঁয়। তারপর বলে, বাবা ওদের বলে দেন, মামলা যেমন আছে তেমনি চলবে। আমি কালামের শাস্তি চাই। পুরো বাড়িতে নীরবতা নেমে আসে। প্রথমে কথা বলে কালামের বাবা, নষ্টা মেয়ে দেখি উচ্চ স্বরে কথা বলে। অন্য কেউ হলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করতো। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে, মেয়েরে বাজারে ভাড়া খাটঁতে লাগায় দেন। অনেক টাকা আয় করতে পারবে। রুকু বলে, সেই চিন্তা আপনাদের করতে হবে না। ধর্ষক কে বিয়ে করা অথবা পতিতাবৃত্তি ছাড়া যদি আর কোনো উপায় থাকে তবে আমি সেই পথের সন্ধান করব।
আড়ালে দাড়িঁয়ে থেকে মা এতক্ষণ সব কথা শুনেছেন। এইবার তিনি বের হয়ে এসে রুকুর উদ্দেশ্যে চীৎকার করে বলেন, তুই জানিস তুই কি করেছিস? তোর বাবা ঘরের বাইরে বের হতে পারে না। তার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তোর বড় বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর পাঠিয়েছে। দুই লাখ টাকা না দিলে মেয়ে কে তারা ফেরত পাঠিয়ে দেবে। যার বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়ে গেছে সেই মেয়েরও চরিত্র খারাপ হতে বাধ্য। বাবা চুপ করে শুনছিলেন। এইবার তিনি কথা বলেন, রুকুর মা, তুমি চুপ করো। মা বলে, আমি চুপ করবো। বাড়িসুদ্ধ মানুষের আত্নহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। মরনাপন্ন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ে ডুবে যাওয়ার আগে যেমন খড়কুটো আকড়েঁ ধরে বাবা তেমনি মরীয়া কণ্ঠে বলেন, আমার সন্তান কে আমি রক্ষা করবো।
লাইব্রেরীতে বসে আছে রুকু। গত কয়েকদিন ধরে সে কলেজে আসা শুরু করেছে। গ্রামের পাশে এই মফস্বল এলাকার কলেজে রুকুর কথা জানতে কারো বাদ নাই। সবাই তাকে এড়িয়ে চলে। ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চে সে একা বসে থাকে। প্রাণপনে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে। লাইব্রেরীতে গল্পদাদু রুকুর পাশে এসে দাড়াঁন। তারপর সহজ কন্ঠে বলেন, এসেছিস মা? বিপদ তো মানুষের জীবনে আসে। বিপদে মানুষের শক্তি পরীক্ষা হয়। তোর জন্য একটা বই এনেছি। গল্পদাদু বইটা টেবিলের উপর রেখে চলে যান। রুকুর চোখ দুটো জলে ভরে যায়। বহুদিন তার সাথে কেউ এমন আন্তরিকভাবে কথা বলে নাই। রুকু বইটা তুলে নেয়। বইটার নাম ইস্পাত। লেখক নিকোলাই অস্ত্রভস্কি। বইয়ের শেষের পাতায় লেখক লিখেছেন, জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। এই জীবন সে পায় মাত্র একবার। তাই এমনভাবে বাচতে হবে যাতে মৃত্যুর সময় মানুষ বলতে পারে, আমি আমার সমস্ত জীবন, সমস্ত শক্তি ব্যয় করেছি এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আদর্শের জন্য।
মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে। মুক্তির জন্য সংগ্রাম? বেচে থাকার এর চেয়ে মহৎ উদ্দেশ্যে আর কি হতে পারে? জীবন কে ভালবেসে রুকু সেই লক্ষ্যের জন্য বেচে থাকবে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অতনু বর্মনের লেখা একটি আঞ্চলিক ভাষার কবিতা।
০৩ মার্চ - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
৩৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪